গৃহবধুকে ওষুধ খাইয়ে- ধর্ষণ, নেক্কারজনক এই কাজ যেন কোন মতেই থামানো যাচ্ছে না। বরং বেড়েই চলেছে দিন দিন। এখন ধর্ষণের সাথে অনেকের দিতে হচ্ছে নিজের প্রাণটাও। সেরকমই আরেকজন ধর্ষণের বলি হল টাঙ্গাইলের এক গৃহবধু।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে অপহরণের পর দফায়-দফায় ধর্ষণ ও শারিরীক নির্যাতনে গৃহবধু কাকলি বেগম (২৩) মৃত্যুর ঘটনায় টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইব্যুনালে মামলা করেছেন নিহতের মা হেলেনা বেগম। মামলা নং- ১৫৯/২০১৮।
এ দিকে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি মেম্বার শাজহান ওরফে কহিনুরের নেতৃত্বে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকায় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। মামলার বাদী হেলেনা বেগমকে মামলা প্রত্যাহরের হুমকী দেয়া হচ্ছে। তা না হলে তাকেও তার মেয়ের মতো অবস্থা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণ ও পারিবরিক সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ধানবাড়ী উপজেলার চুনিয়া পটল গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে কাকলি বেগমের পার্শ্ববর্তী বলদিআটা গ্রামের শাহজান আলীর ছেলে লিটন মিয়ার সাথে ২০১৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্ব জীবন।
এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর ছাহের আলীর ছেলে রেজাউল হক (৩০) মাঝে মধ্যেই কাকলি বেগমকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এতে রাজি না হলে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে গত ১৩ জানুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় কাকলি বেগম স্বামীর বাড়ী থেকে বাবার বাড়ী যাওয়া পথে গৈারাং নামকস্থানে আরো ৭/৮ জন দুর্বৃত্তকে সাথে নিয়ে জোর পূর্বক একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর অজ্ঞাতস্থানে রেখে তাকে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে দফায়-দফায় ধর্ষণ করতে থাকে।
এভাবে দীর্ঘ দিন পৈশাচিক, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে কাকলি বেগম নিস্তেজ হয়ে পড়লে মৃত ভেবে গত ৪ এপ্রিল বুধবার রাতে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে তার বাড়ীর পাশে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যায়। এমতাবস্থায় এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।
এ ব্যাপরে কাকলি বেগমের মা হেলেনা বেগম জানায়, তার মেয়েকে রেজাউল গংরা অপহরণ করে নিয়ে দীর্ঘ তিন মাস যাবৎ ধর্ষণ করে তাকে নিস্তেজ করে বাড়ীর পাশে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনার পর পরই ধনবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলেও প্রভাবশালী রেজাউল গংদের চাপে রহস্যজনক কারণে মামলা নেন নি। ফলে বাধ্য হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি।
কাকলি বেগমের খালাত ভাই আশরাফুল জানান, এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি সদস্য শাজহান ওরফে কহিনুরের নেতৃতে এলাকার মাতাব্বর শফিকুল ইসলাম ওরফে চাঁন মিয়া ও আব্দুল মালেকের সহায়তায় সালিশি বৈঠকে অভিযুক্তদের ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
জরিমানার ৪ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা মেয়ের পরিবার এবং বাকী ২ লাখ টাকা মাতাব্বররা ভাগ বাটোয়ারা করে নিতে চাইলে মেয়ের পরিবার রাজি হয় নি। ফলে মেয়ের পরিবারকে টাকা না দিয়ে ইউপি মেম্বার শাজহান ওরফে কহিনুর ও আব্দুর মালেক মাতাব্বরের নিকট জমা রেখেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম তালুকদার ঘটার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান ঘটনাটি খুবই পৈচাশিক ঘটনা। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।
পরে এ বিষয়ে ধনাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুকুল ইসলাম জানান, শুনেছি মেয়ের সাথে ওই ছেলের সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। তবে আমার জানা মতে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছে